শ্রমিকের পা কেটে নিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত

আহত কালা মিয়া। ঢাকা মেডিকেল, ২০ এপ্রিল। ছবি: আমিনুল ইসলামআহত কালা মিয়া। ঢাকা মেডিকেল, ২০ এপ্রিল। ছবি: আমিনুল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আবুল বাশারের বিরুদ্ধে এক শ্রমিকের পা কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। তবে মূল অভিযুক্তকে এখনো আটক করা যায়নি।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার রূপসদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তির নাম কালা মিয়া (৪৫)। একই ঘটনায় টেঁটা বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তাঁর ছেলে বিপ্লব মিয়া (১৯)। আহত বাবা–ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ওই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

এলাকাবাসী, আহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালা মিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশারের বিরোধ চলে আসছিল। মাস তিনেক আগে রূপসদী গ্রামের একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কালা মিয়ার বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় কালা মিয়া আবুল বাশারকে প্রধান করে ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। সেখান থেকে তাঁদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত। এরপর কালা মিয়া তাঁর পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। সম্প্রতি তাঁরা বাড়ি ফেরেন।
কালা মিয়ার স্ত্রী সালমা বেগম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্বের কারণে আমার ছেলেকে কাজে যেতে মানা করি। তবু বাশার হুমকি দিতেন। এরপর এলাকায় সালিসি বৈঠক করে বিচার চেয়েছিলাম। কিন্তু সুরাহা হয়নি।’ সালমা বেগম আরও বলেন, তাঁর স্বামী একসময় এলাকায় আবুল বাশারের দলের হয়ে কাজ করতেন। কিন্তু চুরির অপবাদে বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলার পর স্বামী ও ছেলে অন্যদের সঙ্গে চলাফেরা করেন। এ বিষয়টি আবুল বাশার মেনে নিতে পারেননি।কালা মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া। ঢাকা মেডিকেল, ২০ এপ্রিল। ছবি: আমিনুল ইসলামকালা মিয়ার ছেলে বিপ্লব মিয়া। ঢাকা মেডিকেল, ২০ এপ্রিল। ছবি: আমিনুল ইসলামঅভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি ঢাকায় অবস্থান করতেছি। কালা মিয়ার পা আমি কেটেছি, এই অভিযোগ সঠিক না। যতটুকু শুনতে পেরেছি, সে আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিল। ওই বাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসী ধরে তাঁকে পিটুনি দিয়েছে। তবে পরবর্তীকালে কী হয়েছে, আমি জানি না।’
প্রত্যক্ষদর্শী, আহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে আবুল বাশার ও তাঁর লোকজন কালা মিয়া ও তাঁর ছেলে বিপ্লব মিয়াকে নিজ বাড়ি থেকে রূপসদী গ্রামের কান্দাপাড়া এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে রাস্তার ফেলে কালা ও তাঁর ছেলেকে মারধর করে আবুল বাশার ও তাঁর লোকজন। একপর্যায়ে উড়ুতে টেঁটা বিদ্ধ করে কালা মিয়ার ডান পা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত কেটে নিয়ে যায়। আর তাঁর ছেলে বিপ্লবকে ডান হাতের কনুইয়ের নিচে দুটি টেঁটা বিদ্ধ করা হয়। পরে বিপ্লবের দুই পায়ের রগ কর্তন করে হামলাকারীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আহত কালা মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমারে বাড়ি থেকে বাশার ও তার বাহিনীর লোকজন ডাইক্যা নিয়া চল (টেঁটা) বিন্দাইয়া দাও দিয়া কুপাইয়া কুপাইয়া ডাইন পাওডার (পা) হাঁটুর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কাইট্যা লইয়া গেছে। হেরা নাকি পাওডা (পা) ফুগাইয়া (শুকিয়ে) ফেরত দিবো। আমার পাও (পা) কাটার লগে জড়িত আবুল বাশার, ধন মিয়া, মনির মেম্বার, আনার হোসেন, আমাদুল, আলীসহ আরও কয়েকজন।’
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় গত রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এটা মধ্যযুগীয় বর্বরতা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করা হয়েছে। কালা মিয়ার পরিবারকে মামলা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আহতদের বক্তব্য নিতে ঢাকায় একজন এসআইকে পাঠানো হয়েছে।’ ওসি আরও বলেন, কালা মিয়ার খণ্ডিত পা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। পায়ের খোঁজে অভিযান চলছে।
এদিকে শনিবার রাতে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবুল বাশারকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এটি অত্যন্ত জঘন্য একটি ঘটনা ঘটেছে। কারও ব্যক্তিগত অন্যায়ের দায়ভার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেবে না। এ ধরনের ঘৃণিত কাজের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

চাকরির খবর

তিন বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু